গিবত বা পরনিন্দা ( الْغِيِّبَةُ ) (পাঠ ১০)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - আখলাক | NCTB BOOK
198
Summary

গিবতের সংজ্ঞা ও গুরুত্ব

গিবত একটি সামাজিক অনাচার, যা অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপনে প্রকাশকে বোঝায়। এটি পরনিন্দার সমার্থক এবং ইসলামে একটি ঘৃণিত গুনাহ হিসেবে বিবেচিত। রাসুল (স.) বলেন, গিবত হলো ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কিছু বলা যা সে অপছন্দ করে।

গিবতের প্রভাব

গিবত মানুষের মধ্যে ঘৃণা ও শত্রুতা সৃষ্টি করে এবং সমাজে অশান্তি আনতে পারে। পবিত্র কুরআনে এভাবে গিবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। মুসলমানদের উচিত গিবত থেকে বিরত থাকা এবং অন্যদের গিবত শোনা থেকেও নিজেকে রক্ষা করা।

গিবতের ক্ষতিপূরণ

গিবত করলে তা থেকে মাফ চাওয়া জরুরি। যদি সেই ব্যক্তি আর জীবিত না থাকে, তবে আল্লাহর নিকট তাঁর গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করতে হবে। গিবত অপর মুসলমানের সম্মান নষ্ট করে এবং এটি ইসলামে হারাম। রাসুল (স.) বলেন, গিবত ব্যভিচারের চেয়েও গুরুতর অপরাধ।

শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম

শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে গিবত বা পরনিন্দার উদাহরণ সম্বলিত একটি চার্ট তৈরি করবে এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

গিবত একটি সামাজিক অনাচার। কারো অগোচরে তার দোষ-ত্রুটি অন্যের কাছে প্রকাশকে গিবত বলে। একে পরনিন্দাও বলা যায়। গিবত একটি ঘৃণিত ও জঘন্য কাজ। এটি কবিরা গুনাহ। এ থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। রাসুল (স.) বলেন, 'গিবত কী তা কি তোমরা জানো?' লোকেরা উত্তরে বলল, 'আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন।' রাসুল (স.) বললেন, 'গিবত হলো তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে তোমার এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে।' জিজ্ঞাসা করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, এটাও কি গিবত হবে? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, 'তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই গিবত হবে। আর তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তবে তা হবে 'বুহতান' বা অপবাদ।' (মুসলিম)
গিবত একটি নিন্দনীয় কাজ। গিবতের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ঘৃণা ও শত্রুতা সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে সমাজ জীবনে ঝগড়াফ্যাসাদসহ নানা অশান্তি সৃষ্টি হয়।
পবিত্র কুরআনুল করিমে গিবত করাকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
আল্লাহর বাণী:
"তোমরা একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে, নিশ্চয়ই তা তোমরা অপছন্দ করবে।" (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২)
গিবত করার মতো গিবত শোনাও পাপের কাজ। কেউ গিবত করলে তাকে গিবত থেকে বিরত রাখা কর্তব্য। তাহলে গিবতচর্চা সমাজ থেকে ক্রমে ক্রমে হ্রাস পাবে বা দূরীভূত হবে।
সর্বাবস্থায়ই গিবত বা পরনিন্দা থেকে মুক্ত হতে হবে। কারণ কোনো অবস্থায়ই গিবত জায়েজ বা বৈধ নয়। কেউ যদি গিবত করে তবে তার ক্ষতিপুরণ দিতে হবে। যার গিবত করা হয়েছে তার থেকে অবশ্যই মাফ চেয়ে নিতে হবে। আর যদি সে মারা যায়, তার থেকে ক্ষমা চাওয়া সম্ভব না হয়, তবে আল্লাহর নিকট তার গুনাহ মাফের দোয়া করতে হবে। রাসুল (স.) বলেন, 'নিঃসন্দেহে গিবতের একটি ক্ষতিপুরণ হলো, তুমি যার গিবত বা কুৎসা রটনা করেছ তার জন্য এভাবে দোয়া করবে: হে আল্লাহ! তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও।'

এক মুসলমানের সম্পদ, জীবন ও সম্মান অপর মুসলমানের কাছে পবিত্র আমানত। গিবত অপর মুসলমান ভাইয়ের সম্মান নষ্ট করে বিধায় এটি ইসলামে হারাম।
গিবত ব্যভিচার থেকেও অধিকতর অপরাধ। রাসুল (স.) বলেছেন, 'গিবত বা পরনিন্দা ব্যভিচার অপেক্ষাও গুরুতর অপরাধ।' (আল-মুজামুল আওসাত)

কাজ: শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে কী কী কাজ গিবত বা পরনিন্দার মধ্যে পড়ে, তার একটি চার্ট তৈরি করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...